বাংলাদেশে এলসি (LC) সম্পর্কিত আইন এবং নীতিমালা

বাংলাদেশে এলসি (LC) সম্পর্কিত আইন এবং নীতিমালা আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় বিধানের সমন্বয়ে পরিচালিত হয়। এটি মূলত আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের নিরাপত্তা ও কার্যক্রম নিশ্চিত করার জন্য ব্যবহৃত একটি ব্যাংকিং প্রক্রিয়া। নিচে এর সাথে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ আইন ও নীতিমালার বিবরণ দেওয়া হলো:

১. এলসি (LC) কি?

এলসি (LC) বা লেটার অফ ক্রেডিট একটি ব্যাংকিং সুবিধা, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্যবহার করা হয়। এটি ক্রেতার ব্যাংক থেকে বিক্রেতার ব্যাংকে একটি গ্যারান্টি হিসেবে কাজ করে যে, নির্দিষ্ট শর্ত অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ হলে বিক্রেতাকে অর্থ প্রদান করা হবে।

২. এলসি খুলতে কী কী তথ্য প্রয়োজন?

এলসি খুলতে সাধারণত নিম্নলিখিত তথ্য প্রয়োজন:

  • ক্রেতার নাম এবং ঠিকানা
  • বিক্রেতার নাম এবং ঠিকানা
  • এলসির পরিমাণ এবং মুদ্রা
  • পণ্য বা সেবার বিবরণ
  • শিপিং ডেট এবং শিপমেন্ট কন্ডিশন
  • এলসি শর্তাবলী

আরও পড়ুনঃ আমদানি রপ্তানি লাইসেন্স

৩. এলসি ব্যবহারের উদ্দেশ্য কি?

এলসি ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য হল বাণিজ্যিক লেনদেনকে নিরাপদ করা, যেখানে ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়ই শর্তাবলী পূরণ না করলে লেনদেন সফল হয় না।

৪. এলসি সম্পর্কিত আইন কী?

বাংলাদেশে এলসি সম্পর্কিত প্রধান আইন হলো ‘এড্রটাল অ্যান্ড কমার্শিয়াল আইন’ (UCP 600), যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এর পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং নীতিমালাও গুরুত্বপূর্ণ।

৫. এলসি এর শ্রেণী কী কী?

এলসি তিনটি প্রধান শ্রেণীতে বিভক্ত:

  • রিভোকেবল এলসি: ক্রেতা যেকোনো সময় শর্তাবলী পরিবর্তন বা বাতিল করতে পারে।
  • আনরিভোকেবল এলসি: বিক্রেতার সম্মতির ছাড়া বাতিল বা পরিবর্তন করা যায় না।
  • ইনস্ট্যান্ট এলসি: শর্ত পূরণ হলে তৎক্ষণাৎ অর্থ প্রদান করা হয়।

৬. এলসি খোলার জন্য ব্যাংককে কী ধরনের ফি প্রদান করতে হয়?

এলসি খোলার জন্য ব্যাংক একটি নির্দিষ্ট ফি নেয় যা সাধারণত এলসির পরিমাণের নির্দিষ্ট শতাংশ বা স্থির মূল্য হতে পারে। এছাড়া অন্যান্য ফি যেমন, ডকুমেন্ট চেকিং, শিপমেন্ট লেটার ফি ইত্যাদি নির্ধারণ করা হয়।

৭. বাংলাদেশ ব্যাংক এলসি নিয়ে কী ধরনের নীতিমালা প্রণয়ন করেছে?

বাংলাদেশ ব্যাংক এলসি সম্পর্কিত বিভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করেছে যার মধ্যে এলসি খোলার প্রক্রিয়া, শর্তাবলী, ডকুমেন্টেশন এবং বিপর্যয়ের সময়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নিয়ম রয়েছে।

৮. এলসি ব্যতীত অন্য কোন পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক লেনদেন করা যায়?

এলসি ছাড়া অন্যান্য পদ্ধতিতে যেমন, অ্যাডভান্স পেমেন্ট, ওপেন অ্যাকাউন্ট, ডকুমেন্টারি রিপু, এবং সিগনড ডিপোজিট ব্যবহৃত হতে পারে। তবে এলসি সবচেয়ে নিরাপদ পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হয়।

৯. এলসি এবং ব্রিড অফ ক্রেডিট (BOC) এর মধ্যে পার্থক্য কী?

এলসি একটি ব্যাংক দ্বারা প্রদত্ত ক্রেডিট লাইন যা বিক্রেতাকে গ্যারান্টি দেয়, যেখানে ব্রিড অফ ক্রেডিট (BOC) একটি পণ্য বা সেবা সরবরাহের পরে ক্রেতার কাছ থেকে ঋণ আদায়ের প্রক্রিয়া।

১০. এলসি সঠিকভাবে কার্যকর করতে কি ধরনের দিকনির্দেশনা মেনে চলা উচিত?

এলসি সঠিকভাবে কার্যকর করতে নিম্নলিখিত দিকনির্দেশনাগুলি মেনে চলা উচিত:

  • এলসির শর্তাবলী পরিষ্কার এবং নির্দিষ্ট হওয়া উচিত।
  • ডকুমেন্টের সাথে পূর্ণাঙ্গ সতর্কতা এবং সঠিকতা বজায় রাখতে হবে।
  • ব্যাংক এবং প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা জরুরি।
  • আইনি বিষয়াদি ও আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে হবে।

এই আইনি কাঠামো এবং নীতিমালার মাধ্যমে বাংলাদেশে এলসি লেনদেন সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হয়।

যোগাযোগ করুনঃ +8801725230535