বিভাগীয় মামলা কি/ What is Departmental Proceeding
সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এ বর্ণিত অপরাধ, সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধির পরিপন্থি কোনো কার্যকলাপ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সময়ে সময়ে জারিকৃত পরিপত্রের মাধ্যমে নির্ধারিত কোনো আচরণের পরিপন্থি কোনো কাজ এর জন্য কোন সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আনুষ্ঠানিক ভাবে গৃহীত পদক্ষেপ/কার্যক্রম কে বিভাগীয় মামলা বা উবঢ়ধৎঃসবহঃধষ চৎড়পববফরহম বলে।
বিভাগীয় মামলার উদ্দেশ্যে/Purpose of Departmental Proceeding (DP)
বাংলাদেশ সংবিধানের ১৪০(২) নং অনুচ্ছেদের বিধানবলে সরকারি কর্ম কমিশনের সহিত পরামর্শক্রমে সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ রাষ্ট্র কর্তৃক প্রণীত হয়। যার মূল উদ্দেশ্যে হচ্ছে – রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ ও জনপ্রশাসনে কর্মরত কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি, কার্য সম্পাদনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণে, শৃংখলা বজায় ও জনবান্ধব প্রশাসন গড়ে তোলার পাশাপাশি প্রশাসনিক শৃংখলা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা/উবঢ়ধৎঃসবহঃধষ চৎড়পববফরহম পরিচালনা করা।
বিভাগীয় মামলার আইনগত ভিত্তিঃ
সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ ও সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এ বর্ণিত বিধানবলে রাষ্ট্র বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কোন সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় কার্যধারা রুজু ও পরিচালনা করতে পারে।
সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রাপ্তিঃ
ক. নাগরিক কর্তৃক
খ. কর্মচারী বা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে
গ. দাপ্তরিক ভাবে।
অভিযোগের বিষয়বস্তুঃ
সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি-৩ বর্ণিত দন্ডের ভিত্তি গুলোই অভিযোগের বিষয়বস্তুঃ
৩। দ-ের ভিত্তি: কর্তৃপক্ষের মতে যে ক্ষেত্রে কোনো সরকারি কর্মচারী –
(ক)শারীরিক বা মানসিক অসামর্থতা, অথবা সাধারণ দক্ষতা বজায় রাখা বা বৃদ্ধির জন্য নির্ধারিত বিভাগীয় পরীক্ষায় পর পর দুই বা ততোধিকবার অকৃতকার্যতা, অথবা যুক্তিসংগত কারণ ব্যতিরেকে উক্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করিতে ব্যর্থ হওয়া, অথবা যুক্তিসংগত কারণ ব্যতিরেকে এই বিধিমালার অধীনে তদন্ত কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ প্রাপ্ত হইয়া তদন্ত কার্যক্রম নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আরম্ভ করিতে কিংবা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে অদক্ষ হন, অথবা দক্ষতা হারান এবং তাঁহার উক্তরূপ দক্ষতা পুনরায় অর্জনের কোনো সম্ভাবনা না থাকে; অথবা
খ) অসদাচরণের দায়ে দোষী হন; অথবা
(গ) পলায়নের দায়ে দোষী হন; অথবা
(ঘ) দুর্নীতি পরায়ণ হন, অথবা নিমবর্ণিত কারণে দুর্নীতি পরায়ণ বলিয়া যুক্তিসংগতভাবে বিবেচিত হন –
(অ) তিনি বা তাহার উর নির্ভরশীল অথবা অন্য যে কোনো ব্যক্তি তাহার মাধ্যমে বা তাহার পক্ষে যদি তাহার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সহিত অসামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো অর্থ-সম্পদ বা অন্য কোনো সম্পত্তির (যাহার যুক্তিসংগত হিসাব দিতে তিনি অক্ষম) অধিকারী হন, অথবা
(আ) তিনি প্রকাশ্য আয়ের সহিত সংগতিবিহীন জীবন-যাপন করেন; অথবা
(ই) তাহার বিরুদ্ধে দুর্নীতি পরায়ণতার অব্যাহত কুখ্যাতি থাকে; অথবা
(ঙ) নাশকতামূলক কর্মে লিপ্ত হন, বা লিপ্ত রহিয়াছেন বলিয়া সন্দেহ করিবার যুক্তিসংগত কারণ থাকে, অথবা নাশকতামূলক কাজে লিপ্ত অন্যান্য ব্যক্তির সহিত জড়িত রহিয়াছেন বলিয়া সন্দেহ করিবার যুক্তিসংগত কারণ থাকে, এবং সেই কারণে তাহাকে চাকুরীতে রাখা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হানিকর বলিয়া বিবেচিত হয়; তাহা হইলে কর্তৃপক্ষ, বিধি ৪ এর উপ-বিধি (৬) এর বিধান সাপেক্ষে, তাহার উপর এক বা একাধিক দ- আরোপ করিতে পারিবে।
অভিযোগ প্রাপ্তির পর পরবর্তী পদক্ষেপঃ
অ. নাশকতার অভিযোগের ক্ষেত্রে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মতামত প্রাপ্তির বিভাগীয় মামলা রুজু বা নথিজাত করা।
আ. বিধিমালা ২০১৮ অনুসারে অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রাথমিক সত্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে প্রশাসনিক তদন্ত পরিচালনা করা হয় কিন্তু অভিযোগের ধরন ও গুরুত্ব বিশ্লেষণ করে প্রাথমিক/প্রশাসনিক তদন্ত ছাড়াই বিভাগীয় মামলা রুজু করা যায়।
বিভাগীয় মামলার অনুসরণীয় প্রক্রিয়াঃ
ক. বিধিমালা ২০১৮ এর ৬ বিধি অনুযায়ী অনুচ্ছেদের প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়।
খ. বিধিমালা ২০১৮ এর ৭ বিধি অনুযায়ী গুরুদন্ডের প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়।
প্রাপ্ত অভিযোগ প্রাপ্তির প্রাথমিক সত্যতা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে প্রাথমিক/প্রশাসনিক তদন্ত করে তবে অভিযোগের ধরন ও গুরুত্ব অনুযায়ী প্রশাসনিক তদন্ত ব্যতিরেকে সরকারি বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়।
প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর অভিযোগ নামা ও অভিযোগ বিবরণী প্রণয়ন করা হয়। যার মাধ্যমে বিভাগীয় মামলা শুরু হয় বা রুজু হয়। অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণী অভিযুক্ত কর্মচারী বরাবর প্রেরণ করা হয়। আর এই প্রেরিত পত্রটিকে প্রথম কারণ দর্শানো নোটিশ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
অভিযোগ নামা ও অভিযোগ বিবরণী প্রাপ্তির ১০ (দশ) কার্য দিবসের মধ্যে জবাব দাখিল করতে হয়। উক্ত সময়ের মধ্যে জবাব প্রদান সম্ভব না হলে দরখাস্ত প্রাপ্তি স্বাপেক্ষে গুরুদন্ডের ক্ষেত্রে ১০ (দশ) কার্য দিবস ও লঘুদন্ডের ক্ষেত্রে ০৭ (সাত) কার্য দিবস অতিরিক্ত সময় মঞ্জুর করা হয়।
অভিযুক্ত জবাবে ব্যক্তিগত শুনানীর ইচ্ছা পোষণ করতে পারে।
অভিযুক্তের জবাব কিংবা শুনানীতে প্রদত্ত বক্তব্য সাক্ষ্য প্রমাণ সমর্থিত মতে সন্তোষজনক না হলে লঘুদন্ড প্রদান পূর্বক অভিযোগ নিষ্পত্তি অথবা কার্যক্রম অধিকতর তদন্ত হলে গুরুদন্ড আরোপযোগ্য হতে পারে এরূপ বিবেচনায় করার প্রয়োজন হলে বা গুরুদন্ড আরোপ যোগ্য মর্মে প্রতীয়মান হলে তদন্ত কর্মকর্তা বা বোর্ড নিয়োগ করা হয়।