প্রতিটি ব্যবসার জন্য সর্বপ্রথম করণীয় হচ্ছে ট্রেড লাইসেন্স করা। ট্রেড লাইসেন্স করার নিয়ম জানা একজন ব্যবসায়ীর জন্য অতিব গুরুত্বপূর্ণ। কারন, ট্রেড লাইসেন্স একজন ব্যবসায়ীকে দেশের যে কোন স্থানে ব্যবসা পরিচালনা করার স্বাধীনতা দেয়। ব্যবসায়র যে কোন কার্যক্রমের জন্য ট্রেড লাইসেন্স একটি বাধ্যতামূলক নথি। কারন এই ট্রেড লাইসেন্স এর মাধ্যমেই যে কোন ব্যক্তি আইনগত ভাবে ব্যবসা পরিচালনার  পাশাপাশি ব্যাংক থেকে ঋণ এবং ব্যবসায়িক সংগঠন গুলোর সদস্যতা পেয়ে থাকেন। তাই চলুন, জেনে নিই কিভাবে ট্রেড লাইসেন্স করতে হয়? ট্রেড লাইসেন্স করতে কি কি কাগজ প্রয়োজন এবং ট্রেড লাইসেন্স করার পদ্ধতি

ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য কি কি লাগে?

ব্যবসার ধরনের উপর ভিত্তি করে ট্রেড লাইসেন্স-এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রেও ভিন্নতা আসে।

স্বত্বাধিকারী ব্যবসার ক্ষেত্রে

→ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের অফিস বা দোকান ভাড়ার চুক্তিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি

অফিস বা দোকান ব্যবসায়ির নিজের জায়গা হলে ইউটিলিটি বিল এবং হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের ফটোকপি। এই অফিস বা দোকানটি অবশ্যই বাণিজ্যিক স্থাপনায় হতে হবে। সাধারণত কোন এলাকায় ভবন দুইভাবে নির্মিত হয়- এক. আবাসিক ও দুই. বাণিজ্যিক। যে কোন ধরনের ব্যবসার অফিস অবশ্যই বাণিজ্যিক ভবনে নিতে হবে, নতুবা ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করা হয় না।

→ স্বত্বাধিকারীর তিন কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি

→ স্বত্বাধিকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র

অংশীদারী ব্যবসার ক্ষেত্রে

→ অফিস বা দোকান ভাড়ার চুক্তিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি

জায়গাটি অংশীদারদের কারোর নিজের হলে ইউটিলিটি বিল এবং হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের ফটোকপি।

→ ৩০০ টাকার দলিলে অংশীদারী ব্যবসার চুক্তিপত্র

→ ম্যানেজিং পার্টনারের তিন কপি ছবি

→ ম্যানেজিং পার্টনারের জাতীয় পরিচয়পত্র

কোম্পানির ক্ষেত্রে

→ অফিস বা দোকান ভাড়ার চুক্তিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি

জায়গাটি অংশীদারদের কারোর নিজের হলে ইউটিলিটি বিল এবং হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের ফটোকপি।

→ কোম্পানির সার্টিফিকেট অফ ইন-কর্পোরেশন

→ কোম্পানির মেমরেন্ডাম ও আর্টিকেল অফ এসোসিয়েশন

→ ম্যানেজিং ডিরেক্টরের তিন কপি ছবি

→ ম্যানেজিং ডিরেক্টরের জাতীয় পরিচয়পত্র

ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য কোথায় যেতে হয়

ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য আবেদনকারীকে প্রথমেই জেনে নিতে হবে তার ব্যবসা পরিচালনার স্থান কোন স্থানীয় সরকারের অধীনে পরিচালিত হবে। যেমন সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা বা উপজেলা পরিষদকে বোঝায়। একটি অফিসের জন্য ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে সারাদেশেই ব্যবসা করা যায়, তবে ব্যবসা প্রসারের স্বার্থে অন্য কোন স্থানীয় সরকারের অধীনে শাখা অফিস করতে হলে সেখানকার জন্য আলাদা ট্রেড লাইসেন্স সেই স্থানীয় সরকারে কাছ থেকে করে নিতে হবে।

ঢাকা শহরের ক্ষেত্রে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আঞ্চলিক অফিসে ট্রেড লাইসেন্স-এর জন্য আবেদন করতে হবে। আবেদন ফর্ম অফিসে অথবা তাদের নির্ধারিত ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ফর্ম পূরণ, আবেদন জমা এবং সেখান থেকেই চূড়ান্তভাবে ট্রেড লাইসেন্সটি গ্রহন করতে হবে। 

ই-ট্রেড লাইসেন্স অনলাইন আবেদন?

বর্তমানে ই-ট্রেড লাইসেন্স এর মাধ্যমেও ঘরে বসে লাইসেন্স করা যায়। অনলাইনে ই-ট্রেড লাইসেন্সের আবেদন করতে হলে প্রথমেই অনলাইনে etradelicence.gov.bd ওয়েবসাইটে ফর্ম পূরণ করে আবেদন জমা এবং টাকা পরিশোধ করা যায়।

ট্রেড লাইসেন্স করতে কত টাকা লাগে?

ব্যবসার ধরনের উপর ভিত্তি করে যেভাবে লাইসেন্স পরিবর্তিত হয় ঠিক সেভাবেই বিভিন্ন ব্যবসার লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় খরচের মধ্যেও বেশ তারতাম্য ঘটে।

ঢাকা সিটি কর্পোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করতে ১ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। এক নামে একাধিক ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যবসার ধরণ অনুযায়ী খরচ আরও বৃদ্ধি পাবে। তবে কোম্পানির ক্ষেত্রে সকল ধরনের ব্যবসা এক লাইসেন্স দিয়ে স্বল্প খরচে করা যাবে। সিটি কর্পোরেশন আদর্শ কর তফসিল, ২০১৬-এর বিধিমালা অনুযায়ী ট্রেড লাইসেন্সের এই খরচ-এর হার সমূহ নির্ধারণ করা হয়।

এছাড়া এর সাথে আকৃতি অনুসারে সাইনবোর্ড ফি, লাইসেন্স বই-এর খরচ ও এগুলোর উপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট-এর খরচ আছে।

ট্রেড লাইসেন্স-এর আনুষঙ্গিক খরচ আবেদন ফর্মে উল্লেখিত ব্যাংক সমূহে অথবা অনলাইনে পরিশোধ করতে হয়।

ট্রেড লাইসেন্স করতে কত সময় লাগে?

ট্রেড লাইসেন্স প্রক্রিয়ায় সময় লাগতে পারে আবেদন ফর্ম জমা দেয়ার দিন থেকে ৫-৭ কর্মদিবস এর মধ্যে ট্রেড লাইসেন্স সংরহ করতে পারবেন।

ধাপে ধাপে ট্রেড লাইসেন্স করার পদ্ধতি

ধাপ-১/ সর্বপ্রথম কাজ হচ্ছে ব্যবসায়িক কেন্দ্রের জন্য সঠিক অঞ্চল নির্ধারণ করা।

ধাপ-২/ আই ফর্ম ও কে ফর্ম নামে ট্রেড লাইসেন্স আবেদনের দুটি ভিন্ন ধরনের ফরম আছে। ছোট কিংবা সাধারণ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য আই ফর্ম এবং বড় ব্যবসার ক্ষেত্রে কে ফর্ম সংগ্রহ করতে হয়। প্রতিষ্ঠানটি যে অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত সেই অঞ্চলের অফিস থেকেই এই ফর্মগুলো সংগ্রহ করা যাবে, যেগুলোর প্রতিটির দাম ১০ টাকা।

ধাপ-৩/ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে ট্রেড লাইসেন্স-এর ফি ভ্যাটসহ জমা দিয়ে রশিদ সংগ্রহ করতে হবে।

ধাপ-৪/ ব্যবসার ধরন অনুযায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন ফর্মটির সাথে ব্যাংকে ফি জমা রশিদটি সংযুক্ত করে স্থানীয় সরকারের অফিসে জমা দিতে হবে।

ধাপ-৫/ স্থানীয় সরকারের অধীভূক্ত আঞ্চলিক অফিস থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা ব্যবসায়িক কেন্দ্রটি পরিদর্শন করে অফিসে রিপোর্ট করবেন।

ধাপ-৬/ পূর্ববর্তী প্রতিটি ধাপ সঠিকভাবে সম্পন্ন হলে এই চূড়ান্ত পর্যায়ে ট্রেড লাইসেন্স পাওয়া যাবে সেই আঞ্চলিক অফিস থেকে।

ট্রেড লাইসেন্স এর মেয়াদ কত দিন?

প্রতিটি নতুন ট্রেড লাইসেন্স-এর মেয়াদ থাকে এক বছর। স্বভাবতই ট্রেড লাইসেন্স এর কার্যকারিতা বহাল রাখতে হলে প্রতি বছরই ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়।

ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করার নিয়ম ও ফি

ট্রেড লাইসেন্স নতুন করার সময় যে সরকারি ফিগুলো প্রদান করা হয় তা হলো, ট্রেড লাইসেন্স ফি, সাইন বোর্ড ফি এবং এই দুটো মিলে যত টাকা হয় তার উপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট। আর ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের সময় এই খরচগুলোর সাথে যোগ হয় উৎসকর, যেটি সিটি করপারেশনের ক্ষেত্রে ৩,০০০ টাকা। ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার ক্ষেত্রে এটি কিছুটা কম হয়।

ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করলে কি হয়?

বৈধভাবে ব্যবসা করার জন্য ট্রেড লাইসেন্স একটি অপরিহার্য সনদ। ট্রেড লাইসেন্স দেয়া এবং এর নবায়ন স্থানীয় সরকারের কর আদায়ের একটি মাধ্যম। এটি ছাড়া যে কোন ব্যবসা প্রতারণার সামিল হবে। এ অপরাধে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রতারণার হিসেবে দেওয়ানী বা ফৌজদারি মামলাও হতে পারে। তাই সঠিক ও বৈধ ভাবে ব্যবসা পরিচালনায় ট্রেড লাইসেন্স-এর কোন বিকল্প নেই। 

যোগাযোগ করুনঃ 01725230535