জমি রেজিস্ট্রেশন আইন

জমি রেজিস্ট্রেশন আইন হলো এমন একটি আইন যা জমি বা স্থাবর সম্পত্তি সংক্রান্ত মালিকানা হস্তান্তর, ক্রয়-বিক্রয়, বা ইজারা দেওয়ার ক্ষেত্রে আইনি বৈধতা প্রদান করে। এটি জমির দলিল নিবন্ধনের মাধ্যমে মালিকানা সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করে। এই আইনের প্রধান উদ্দেশ্য জমি সংক্রান্ত জালিয়াতি প্রতিরোধ এবং দলিলের সঠিকতা রক্ষার মাধ্যমে জমির লেনদেনকে নিরাপদ রাখা।

জমি রেজিস্ট্রেশন আইনের অতিরিক্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক:

১. নিবন্ধন বাধ্যতামূলক
রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮-এর ধারা ১৭ অনুযায়ী, ১০০ টাকার বেশি মূল্যের যেকোনো স্থাবর সম্পত্তির হস্তান্তরের দলিল নিবন্ধন করতে হবে।
হস্তান্তর না হলেও, জমি লিজ সংক্রান্ত চুক্তি বা ভবিষ্যৎ বিক্রয়ের প্রতিশ্রুতি রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক।
২. স্বেচ্ছামূলক নিবন্ধন
ধারা ১৮ অনুযায়ী, কিছু দলিল যেমন দানপত্র বা কোনো অস্থাবর সম্পত্তির দলিল রেজিস্ট্রেশন ঐচ্ছিক হতে পারে।
৩. নিবন্ধনের স্থান
দলিল রেজিস্ট্রেশন নির্দিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে করতে হয়, যা সাধারণত জমির অবস্থান অনুযায়ী নির্ধারিত।
৪. সাক্ষীদের ভূমিকা
দলিল নিবন্ধনের সময় সাক্ষীদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। সাক্ষীরা নিশ্চিত করেন যে লেনদেনটি স্বেচ্ছায় সম্পন্ন হয়েছে।
৫. ভূমি পরিমাপ ও যাচাই
দলিল নিবন্ধনের আগে জমির সঠিক পরিমাপ এবং মালিকানার বৈধতা যাচাই করা আবশ্যক।
জরিপের তথ্য (সিএস, এসএ, আরএস) এবং নামজারি (Mutation) তথ্য যাচাই করা হয়।
৬. দলিলের ধরন
জমি রেজিস্ট্রেশনের জন্য বিভিন্ন ধরনের দলিল ব্যবহৃত হয়:
বিক্রয় দলিল (Sale Deed): জমি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত দলিল।
দানপত্র (Gift Deed): বিনামূল্যে জমি হস্তান্তরের দলিল।
লিজ দলিল (Lease Deed): জমি বা সম্পত্তি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ভাড়া দেওয়ার দলিল।
বণ্টননামা (Partition Deed): উত্তরাধিকারীদের মধ্যে জমি ভাগাভাগির দলিল।

আরও পড়ুনঃ থানায় জিডি করার পদ্ধতি

জমি রেজিস্ট্রেশনে করণীয় ধাপসমূহ:

ধাপ ১: প্রয়োজনীয় দলিল সংগ্রহ ও প্রস্তুতকরণ
জমির খতিয়ান ও দাগ নম্বর যাচাই।
জমির বর্তমান মালিকানা যাচাই (উত্তরাধিকার সূত্রে বা ক্রয়কৃত)।
দলিল লিখন এবং স্ট্যাম্প লাগানো।
ধাপ ২: স্ট্যাম্প ডিউটি ও রেজিস্ট্রেশন ফি প্রদান
জমির মূল্যের উপর নির্ধারিত হার অনুযায়ী স্ট্যাম্প ফি এবং নিবন্ধন ফি প্রদান।
এটি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হার অনুসারে পরিবর্তিত হয়।
ধাপ ৩: সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে জমা প্রদান
দলিল, স্ট্যাম্প ফি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হয়।
দলিল জমার জন্য আবেদন ফর্ম পূরণ করা হয়।
ধাপ ৪: রেজিস্ট্রেশনের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া
রেজিস্ট্রেশন অফিসার দলিল যাচাই করে এবং সাক্ষীদের বয়ান গ্রহণ করেন।
যাচাই শেষে দলিলের একটি রেজিস্টার্ড কপি প্রদান করা হয়।

জমি রেজিস্ট্রেশন না করার পরিণতি:

১।মালিকানার আইনগত সুরক্ষা হারানো:
নিবন্ধন না করা থাকলে দলিল আইনি বৈধতা পায় না।
মালিকানার ওপর অন্য কেউ দাবি জানালে আদালতে তা রক্ষা করা কঠিন হয়।

২।জমি সংক্রান্ত জালিয়াতি:
নিবন্ধিত দলিল না থাকলে জমি সংক্রান্ত জালিয়াতির শিকার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

৩।সরকারি নথিতে নাম অন্তর্ভুক্তির অসুবিধা:
রেজিস্ট্রেশন না থাকলে নামজারি বা জমির কর প্রদানে অসুবিধা হয়।

ভূমি রেজিস্ট্রেশন আইন সংশোধন ও হালনাগাদ:

বর্তমানে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া চালু হচ্ছে। বাংলাদেশে ই-নামজারি এবং ই-রেজিস্ট্রেশন সেবা চালু হয়েছে, যা জমি রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও নিরাপদ করেছে।

আপনি যদি জমি রেজিস্ট্রেশন বা এ সংক্রান্ত কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে আরও জানতে চান, বিস্তারিত তথ্যের জন্য জানাতে পারেন।

যোগাযোগ করুনঃ +8801725230535